• বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে  হাসিনার পথেই হাঁটছে ইউনূস সরকার

গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে  হাসিনার পথেই হাঁটছে ইউনূস সরকার

  আন্দোলন প্রতিবেদন  

রবিবার, ১১ মে ২০২৫  |  অনলাইন সংস্করণ

হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার বিগত ১৫ বছর শ্রমিক-কৃষকসহ নিপীড়িত জনগণের যেকোনো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকেই কঠোর হস্তে দমন করেছিল। সরকারের ন্যূনতম সমালোচনা যেন না করতে পারে সেজন্য তৈরি করেছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। গণ-আন্দোলনের চাপে এই আইনের নাম পাল্টে করেছিল সাইবার নিরাপত্তা আইন। শুধু নামই পাল্টেছিল, নিপীড়নের ধরন একই ছিল। এই আইনে হাজার হাজর মানুষকে গ্রেফতার করে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছিল।  

গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শাসনামলের অবসানের ফলে জনমনে নব আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ইউনূস সরকারের আমলেও সে আশায় গুড়েবালি। বেশ কয়েকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের ভূমিকা সেটা প্রমাণ করেছে। আনসারদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন আওয়ামী লীগের উস্কানি বলে যৌথবাহিনী নির্মমভাবে দমন করে। এ বছরের নতুন পাঠ্যপুস্তকে বেশ কয়েকটি  জুলাই অভ্যুত্থানের আঁকা গ্রাফিতি কাভারে যুক্ত হয়েছিল। যার মধ্যে একটি ছিল “আদিবাসী” শব্দ যুক্ত গ্রাফিতি। কিন্তু বাঙালি উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনায় সজ্জিত নব্য গজানো ভুঁইফোঁড় একটি সংগঠন “স্টুডেন্টস ফর সবেরেন্টি” “আদিবাসী” শব্দ নিয়ে আপত্তি তোলায় এনসিটিবি তড়িঘড়ি করে সেই গ্রাফিতিটি সরিয়ে ফেলে। সরকারি ইশারা ব্যতীত এ কাজ এনসিটিবি দ্বারা করা অসম্ভব। এর প্রতিবাদে ঢাকায় “সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা” এনসিটিবি কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচিতে পুলিশের সামনে “স্টুডেন্টস ফর সবেরেন্টি” সংগঠনের ছাত্ররা পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। পুলিশ নীরব দর্শকের  ভূমিকা নেয়। অথচ হামলার প্রতিবাদে “সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা” ব্যানারে বিক্ষোভ-সমাবেশে পুলিশ ঠিকই লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস, জল কামান নিক্ষেপ করে অন্তত ২০ জনকে আহত করে। হাসিনার পতনের পর অকার্যকর পুলিশকে আদিবাসীদের পক্ষে আন্দোলনকারীদের উপর নির্যাতনের জন্য স্বরূপে ফিরিয়ে আনা হয়।  

এছাড়া ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশ ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশকে লাঠিপেটা করতেও দেখা যায়, যা দমনমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রের চেহারাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। প্রাথমিকের সুপারিশে বাদপড়া শিক্ষকরা এ সরকারের বৈষম্যমূলক রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে সেখানেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে। মাগুড়ায় আট বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণের পর ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনেও পুলিশ সন্ত্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের উপর দমন-নির্যাতন করে হতাহত করে। গত রমজানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিক-ছাত্রদের উপর পুলিশ দমন চালায়। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়ের উপর নৃশংস আক্রমণে জুলাই অভ্যুত্থানে পরাজিত পুলিশের ক্ষোভের নগ্নরূপ প্রকাশিত হয়।  

হাসিনার তৈরি সাইবার নিরাপত্তা আইন এখনও বলবৎ রয়েছে। মডেল মেঘলা আলমকে ডিবি পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ফেসবুকে প্রতিবাদ তীব্র হলে ‘জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার হুমকিস্বরূপ’ ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টার কারণ দেখিয়ে ’৭৪ এর বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মুজিব এবং হাসিনার তৈরি সকল কালাকানুন অক্ষত রেখে নিজ গোষ্ঠীগত স্বার্থে এ সরকার তথাকথিত সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে, যে সংস্কার তাদের শাসন-ব্যবস্থায় কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন ব্যতীত আর কিছু নয়। 

এসব ঘটনায় প্রমাণ হয়, গণতান্ত্রিক এবং ন্যায্য আন্দোলনকে ইউনুস সরকারও আগের সরকারের মতোই পুলিশ দিয়ে দমন করছে। হাসিনা আমলে যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনকেই বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হত। ইউনুস সরকারও যেকোনো আন্দোলনকেই আওয়ামীলীগ-ভারতের ষড়যন্ত্র বলে কঠোর হস্তে দমন করছে।  

জনগণের ন্যায্য অধিকার পাওয়া সম্ভব কেবলমাত্র শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তসহ ব্যাপক জনগণের রাষ্ট্র-সরকার-সংবিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। জনগণকে সে লক্ষ্যেই সংগঠিত হতে হবে।

গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে  হাসিনার পথেই হাঁটছে ইউনূস সরকার

 আন্দোলন প্রতিবেদন 
রবিবার, ১১ মে ২০২৫  |  অনলাইন সংস্করণ

হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার বিগত ১৫ বছর শ্রমিক-কৃষকসহ নিপীড়িত জনগণের যেকোনো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকেই কঠোর হস্তে দমন করেছিল। সরকারের ন্যূনতম সমালোচনা যেন না করতে পারে সেজন্য তৈরি করেছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। গণ-আন্দোলনের চাপে এই আইনের নাম পাল্টে করেছিল সাইবার নিরাপত্তা আইন। শুধু নামই পাল্টেছিল, নিপীড়নের ধরন একই ছিল। এই আইনে হাজার হাজর মানুষকে গ্রেফতার করে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছিল।  

গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শাসনামলের অবসানের ফলে জনমনে নব আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ইউনূস সরকারের আমলেও সে আশায় গুড়েবালি। বেশ কয়েকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের ভূমিকা সেটা প্রমাণ করেছে। আনসারদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন আওয়ামী লীগের উস্কানি বলে যৌথবাহিনী নির্মমভাবে দমন করে। এ বছরের নতুন পাঠ্যপুস্তকে বেশ কয়েকটি  জুলাই অভ্যুত্থানের আঁকা গ্রাফিতি কাভারে যুক্ত হয়েছিল। যার মধ্যে একটি ছিল “আদিবাসী” শব্দ যুক্ত গ্রাফিতি। কিন্তু বাঙালি উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনায় সজ্জিত নব্য গজানো ভুঁইফোঁড় একটি সংগঠন “স্টুডেন্টস ফর সবেরেন্টি” “আদিবাসী” শব্দ নিয়ে আপত্তি তোলায় এনসিটিবি তড়িঘড়ি করে সেই গ্রাফিতিটি সরিয়ে ফেলে। সরকারি ইশারা ব্যতীত এ কাজ এনসিটিবি দ্বারা করা অসম্ভব। এর প্রতিবাদে ঢাকায় “সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা” এনসিটিবি কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচিতে পুলিশের সামনে “স্টুডেন্টস ফর সবেরেন্টি” সংগঠনের ছাত্ররা পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। পুলিশ নীরব দর্শকের  ভূমিকা নেয়। অথচ হামলার প্রতিবাদে “সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা” ব্যানারে বিক্ষোভ-সমাবেশে পুলিশ ঠিকই লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস, জল কামান নিক্ষেপ করে অন্তত ২০ জনকে আহত করে। হাসিনার পতনের পর অকার্যকর পুলিশকে আদিবাসীদের পক্ষে আন্দোলনকারীদের উপর নির্যাতনের জন্য স্বরূপে ফিরিয়ে আনা হয়।  

এছাড়া ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশ ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশকে লাঠিপেটা করতেও দেখা যায়, যা দমনমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রের চেহারাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। প্রাথমিকের সুপারিশে বাদপড়া শিক্ষকরা এ সরকারের বৈষম্যমূলক রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে সেখানেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে। মাগুড়ায় আট বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণের পর ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনেও পুলিশ সন্ত্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের উপর দমন-নির্যাতন করে হতাহত করে। গত রমজানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিক-ছাত্রদের উপর পুলিশ দমন চালায়। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়ের উপর নৃশংস আক্রমণে জুলাই অভ্যুত্থানে পরাজিত পুলিশের ক্ষোভের নগ্নরূপ প্রকাশিত হয়।  

হাসিনার তৈরি সাইবার নিরাপত্তা আইন এখনও বলবৎ রয়েছে। মডেল মেঘলা আলমকে ডিবি পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ফেসবুকে প্রতিবাদ তীব্র হলে ‘জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার হুমকিস্বরূপ’ ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টার কারণ দেখিয়ে ’৭৪ এর বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মুজিব এবং হাসিনার তৈরি সকল কালাকানুন অক্ষত রেখে নিজ গোষ্ঠীগত স্বার্থে এ সরকার তথাকথিত সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে, যে সংস্কার তাদের শাসন-ব্যবস্থায় কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন ব্যতীত আর কিছু নয়। 

এসব ঘটনায় প্রমাণ হয়, গণতান্ত্রিক এবং ন্যায্য আন্দোলনকে ইউনুস সরকারও আগের সরকারের মতোই পুলিশ দিয়ে দমন করছে। হাসিনা আমলে যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনকেই বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হত। ইউনুস সরকারও যেকোনো আন্দোলনকেই আওয়ামীলীগ-ভারতের ষড়যন্ত্র বলে কঠোর হস্তে দমন করছে।  

জনগণের ন্যায্য অধিকার পাওয়া সম্ভব কেবলমাত্র শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তসহ ব্যাপক জনগণের রাষ্ট্র-সরকার-সংবিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। জনগণকে সে লক্ষ্যেই সংগঠিত হতে হবে।

আরও খবর
 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র